promotion

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কী?

ক্যাশবিহীন ও দ্রুত লেনদেন সুবিধার কারণে বিশ্বে কার্ড এর মাধ্যমে ব্যাংকিং বাড়ছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যে কেনাকাটার পেমেন্ট প্রদান সুবিধা ও দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের সুবিধা ব্যাংকিং এখন গ্রাহক চাহিদার শীর্ষে।

তবে ব্যাংক কার্ডের মধ্যে বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড একই মনে হলেও এতে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে।

ডেবিট কার্ড

সাধারণত সেভিংস ও কারেন্ট অ্যাকাউন্টের গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ড দেওয়া হয়। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অধীনে ডেবিট কার্ড দেওয়া হয়। ওই অ্যাকাউন্টে যদি টাকা জমা থাকে তাহলে ডেবিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। এছাড়া অনলাইন কেনাকাটায় পেমেন্ট ও কার্ড থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা যায়।

এ কার্ডে ১৬ ডিজিটের একটি কার্ড নম্বর থাকে। এছাড়া কার্ড হোল্ডারের নাম ও কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের নম্বর থাকে। কার্ডের অপর পাশে একটি তিন সংখ্যার সিভিসি নম্বর থাকে। কার্ডটি ব্যবহার করতে এর গ্রাহককে একটি পিন নম্বর সেট করে দেওয়া হয়।

ক্রেডিট কার্ড

ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ডের মতো হলেও এর ব্যবহারে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ কার্ডে ব্যাংক থেকে নির্ধারিত পরিমাণ লোন দেওয়া হয়। এই টাকা কার্ডধারী ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিমাসে নির্ধারিত সময়ে খরচ করা টাকা পরিশোধ করে আবারো লিমিট নেওয়া যায়। ডেভিট কার্ড সব অ্যাকাউন্ট হোল্ডার নিতে পারলেও ক্রেডিট কার্ড সবাই পান না। নির্দিষ্ট বেতনের চাকরিজীবী বা নির্দিষ্ট আয়ের ব্যববসায়ীদের এ কার্ড অফার করে ব্যাংক। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিপোজিটের বিপরীতেও এ কার্ড পাওয়া যায়।

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য:

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ডেবিট কার্ড পেতে হলে অবশ্যই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। সেটি সেভিংস কিংবা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টের অধীনেই ডেভিড কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে। অপরদিকে, নির্দিষ্ট কোনো ব্যাংক না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড দেয় ব্যাংক।

কার্ডে টাকার উৎস

ডেবিট কার্ডের অর্থের উৎস মূলত গ্রাহক নিজেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকের সঞ্চয় করা টাকা ডেভিট (বিয়োগ হয়) করেন গ্রাহক নিজেই। এখানে অ্যাকাউন্টে যত টাকা থাকতে তত টাকাই উত্তোলন করতে পারবেন।

অপরদিকে ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংক থেকে সাময়িকভাবে লিমিটের সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। ওই টাকা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচ করা হয়। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে (প্রতি মাসের ১৫ তারিখ) খরচ করা টাকা পরিশোধ করতে হয়।

কত টাকা খরচ করা যায়

ডেবিট কার্ডে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যত টাকা থাকবে সব টাকাই খরচ করতে পারবেন। তবে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে প্রতিদিনের জন্য এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লিমিট দেওয়া হয়। বিভিন্ন ব্যাংক অনুসারে এ লিমিট ভিন্ন হতে পারে।

অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংক থেকে আপনি যত টাকা লিমিট পাবেন তত টাকাই খরচ করতে পারবেন। যেমন; ব্যাংক আপনার কার্ডে ৫০ হাজার টাকা লিমিট দিলে, আপনি যদি ওই টাকা পুরোটাই খরচ করে ফেলেন। তাহলে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের আগে ওই টাকা পরিশোধ করে সঙ্গে সঙ্গেই আবার ৫০ হাজার টাকার লিমিট পাবেন। তবে এর বেশি খরচ করা যাবে না।

সুদ আছে কী

ডেবিট কার্ডে টাকা খরচে কোনো সুদ নেই। কারণ আপনার জমানো টাকা আপনি খরচ করবেন। তাই এখানে কোনো সুদ যুক্ত হবে না। তবে অনেক ব্যাংক গ্রাহকের একাউন্টে জমা টাকার ওপর সুদ দিয়ে থাকে, যা আপনার জমানো টাকার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আপনি যদি সুদ গ্রহণ করতে না চান সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া যদি সুদ চলে আসে এবং ওই টাকা নিতে নিজে খরচ করতে না চান তবে এ বিষয়ে আপনার করণীয় ধর্মীয় স্কলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন।  

অপরদিকে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতে বিলম্ব করলে সুদসহ বিল প্রদান করতে হয়। এছাড়া নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ করলে সুদ দিতে হয় না। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের টাকা যেহেতু ব্যাংক ঋণ হিসেবে দিয়ে থাকে তাই এই টাকা জমানো থাকলেও এ থেকে কোনো ইন্টারেস্ট আপনি পাবেন না।  

চার্জ

ডেবিট কার্ড ব্যবহারে প্রতি বছর কার্ড রক্ষণাবেক্ষণ ফি দিতে হবে। এটি মূলত ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেও প্রতি বছর ফি দিতে হয়। এটি ১০০০ থেকে কার্ড অনুযায়ী আরো বেশি হতে পারে। তবে অনেক ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটার ভিত্তিতে বাৎসরিক ফি ফ্রি করে দিয়ে থাকে।

মাসিক স্টেটমেন্ট

ডেবিট কার্ডে মাসিক স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয় না। আপনার প্রয়োজন হলে ব্যাংক থেকে অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট উত্তোলন করে ডেবিট কার্ডের লেনদেন দেখতে পারবেন। এছাড়া আপনি এটিএম বুথ থেকে সর্বশেষ পাঁচটি লেনদেনের মিনি স্টেট্মেন্ট নিতে পারেন। অপরদিকে ক্রেডিট কার্ডে প্রতি মাসে আপনার ইমেইলে স্টেটমেন্ট প্রদান করবে। এছাড়া মুঠোফোনে ম্যাসেজে মিনি স্টেটমেন্ট দেবে।

সুযোগ-সুবিধা

ডেবিট কার্ডে সহজে টাকা উত্তোলন ও কেনাকাটায় পেমেন্ট দেওয়া ছাড়া বেশি কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকেনা। তবে অনেক সময় বিভিন্ন ব্যাংক নির্দিষ্ট কিছু শপ বা প্লাটফর্মে কেনাকাটায় ক্যাশব্যাক সুবিধা দিয়ে থাকে।

অপরদিকে ক্রেডিট কার্ড অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয় ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশ ব্যাক, ডিসকাউন্ট ও রিওয়ার্ড পয়েন্ট অর্জনের সুবিধা দেওয়া হয়। এছাড়া কেনাকাটার উপর ভিত্তি করে অনেক ব্যাংক বাৎসরিক ফি ফ্রি করে দেয়।

চেক বই

ডেভিট কার্ডের অ্যাকাউন্টের অধীনে চেক বই পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার জমানো টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ডের অধীনেও একটি অ্যাকাউন্ট থাকে এর অধীনে আপনি চেক বই নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি আপনার অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন। এতে একটি ট্রানপ্সফার ফি দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে প্রতি মাসে চেক বই দিয়ে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এতে কোনো সুদ নেই। তবে নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংক নির্ধারিত সুদ দিতে হবে।

এটিএম বুথে টাকা উত্তোলন

বর্তমানে ডেভিট কার্ডে দেশের কোনো প্রান্তের যে কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। যে ব্যাংকের কার্ড যে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে কোনো চার্জ নেই। তবে অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে প্রতি ট্রানজেকশনে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত চার্জ কাটা হয়।

অন্যাদিকে ক্রেডিট কার্ড দিয়েও দেশের কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে মাস শেষে বিল পরিশধের সময় বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের কারণে ওই টাকার জন্য সুদ দিতে হয়। এতে সাধারণত ইন্টারেস্ট রেট একটু বেশি হয়।

তাই অনেকেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সরাসরি বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন না। তবে নগদ টাকার প্রয়োজন হলে কার্ডের অধীনে থাকা চেক বই দিয়ে নগদ টাকা উত্তোলন করেন। এতে বাড়তি খরচ বেঁচে যায় এছাড়া সুদের চিন্তাও নেই।

ইএমআই সুবিধা

ডেবিট কার্ডে ইএমআই (কিস্তিতে পণ্য কেনা) সুবিধা নেই। তবে ক্রেডিট কার্ডে ইএমআই সুবিধা আছে। এছাড়া পণ্যের অনেক কোম্পানি ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত শূন্য শতাংশ ইন্টারেস্টে ইএমআই সুবিধা দেয়।এতে যারা সুদ দিতে চান না তাদের জন্য এ সুবিধাটি কার্যাকর।   

কোনটি বেশি ভালো

ডেবিট ও ক্রেডিট দুধরনের কার্ডেই পৃথক সুবিধা রয়েছে। উল্লেখিত পার্থক্যগুলো নিরুপণে কার্ড বাছাইয়ে আপনার সুবিধা হবে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড নিয়ে অজানা ভীতি কিছুটা হলেও কেটে যাবে। ক্রেডিট কার্ডে অযথা খরচ না করাই ভালো। মাস শেষে হাতে টাকা না থাকলে কিংবা বাজার করার টাকা না থাকলে এ কার্ড দিয়ে বাজার করতে পারবেন। পরবর্তী মাসে নির্ধারিত তারিখে টাকা পরিশোধ করে দিলে আর কোনো চিন্তা নেই।

তবে ডেবিট কিংবা ক্রেডিট যে কার্ডই হাতে থাকে, খরচ করতে ইচ্ছে হয়। তাই মিতব্যয়ী না হলে দুটো কার্ডই আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।

 আরো পড়ুন: 

মন্তব্যসমূহ

Advertise

Advertise
Attar - Chocolate Fragrance Perfume | Daraz | Buy Now

promotional

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনলাইনে ক্যাপচা এন্ট্রি করে আয় করুন, সেরা ১০টি জব সাইট

নার্সারি ব্যবসার আদ্যোপান্ত, ঝুঁকি কম লাভ বেশি

অনলাইনে অডিও শুনে টাকা আয় করুন, যেভাবে হবেন ট্রান্সক্রিপশনবিদ

Promotional