মাত্র ৫ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু করবেন যে লাভজনক ব্যবসা
ব্যবসা করার জন্য টাকা যোগার করেছেন কিন্তু কী ব্যবসা করবেন তা নিয়ে দ্বিধা। ইচ্ছে আছে, ৪-৫ জন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করবেন। কিন্তু অনেকেই সঠিক পথ ও পদ্ধতি না জানার কারণে ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। এছাড়া কী ব্যবসা দিয়ে শুরু করলে ঝুকি কম থাকবে, এ নিয়েও চিন্তিত থাকেন। তাদের জন্য লাভজনক ৫টি ব্যবসার ধারণা।
লাভজনক ৫টি ব্যবসার ধারণা:
১। ডিলারশিপ:
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন পণ্য উৎপাদন করছে। এছাড়া গত ১০ বছরের তুলনায় উৎপাদনমুখী কোম্পানির উত্থান হয়েছে। এর ফলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিপুল পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।
এসব পণ্য কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র নিজেরা একাই বাজারজাত করে না। দেশব্যাপী পণ্য বাজারজাত করতে ডিলারশিপ দেয় কোম্পানিগুলো।
যে পণ্য ও কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে পারেন:
- প্রাণ কোম্পানির- স্নেকস, ডেইরি, বেভারেজ আইটেম।
- আকিজ কোম্পানির- বেভারেজ, ডেইরি, বেকারী।
- এসিআই কোম্পানির- আটা-ময়দা, সুজি-লবন, মসলা।
- ফ্রেশ কোম্পানির- আটা-ময়দা, মসলা, গ্রোসারি আইটেম।
- বিডি ফুড- স্নেকস।
- নেসলে- স্নেকস আইটেম।
- কোকাকোলা, সেভেন আপের মতো সফট ড্রিংকস আইটেম।
ডিলারশিপ নিতে কী কী লাগে, কীভাবে নিবেন?
সাধারণত কোম্পানিগুলো, নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক ডিলাশিপ দিয়ে থাকে। আগে জানতে হবে; আপনি যে কোম্পানির, যে আইটেম নিতে চাচ্ছেন, ওই এলাকায় এটি কেউ নিয়েছে কী না। যদি না নিয়ে থাকে তখন কোম্পানির ওয়েবসাইট কিংবা সরাসরি প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে পারেন।
তবে আবেদনের আগে আপনার কাছে ডিলারশিপ নেওয়ার পর্যাপ্ত অর্থ আছে কী না সেটি নিশ্চিত করুন। কোম্পানিগুলো মুলত সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ডিপোজিটের মাধ্যমে ডিলারশিপ দেয়। কোম্পানি ও পণ্য অনুযায়ী এর পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। ডিলারশিপে আপনার কাছে থেকে পণ্যের মূল দাম ছাড়া একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন নেবে কোম্পানি। আপনি সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে ডিলারশিপ এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
যেভাবে ব্যবসা শুরু করবেন:
- প্রাথমিকভাবে এলাকা নির্বাচন করুন। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করুন।
- ডিলারশিপ নিতে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- একটি ওয়ার হাউজ (গোডাউন) ও অফিস কক্ষ ভাড়া নিন।
- সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ (এসআর), ম্যানেজার, ভ্যান বা গাড়ি ড্রাইভার ও মালামাল লোডারসহ মোট ৫জন নিয়োগ দিন।
- কোম্পানি পণ্য দিয়ে গেলে বাজারে নেমে পরুন।
২। মিনি সুপারশপ:
শহরকেন্দ্রিক গ্রোসারি শপে প্রতিদিন ক্রেতা বাড়ছে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় বিপুল ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী গ্রোসারি শপ অপ্রতুল। ৫ জন কর্মচারী নিয়ে নেমে যেতে পারেন মিনি সুপারশপের ব্যবসায়। এ ক্ষেত্রে আপনি দুভাবে ব্যবসাটি করতে পারেন।
যে কোনো চেইন সুপার শপের ব্র্যান্ড নিয়ে নির্দিষ্ট কমিশনে ব্যবসা। নিজে এককভাবে মিনি সুপারশপ চালু করা।
২.১। চেইন সুপার শপের ব্র্যান্ড নেওয়া অনেকটা ডিলারশিপ ব্যবসার মতোই। এখানে ওয়ার হাউজের স্থলে শো-রুম ভাড়া নিতে হবে। আর কর্মচারীরা শপের মধ্যেই কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রেও মিনি সুপারশপে অন্তত ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
২.২। এককভাবে মিনি সুপারশপ চালু করতে হলে আপনাকে প্রথমে জনবহুল আবাসিক এলাকা বাছাই করতে হবে। সেখানে মূল সড়কে অন্তত ১২-১৫শ স্কয়ার ফিটের দোকান ভাড়া নিতে হবে। তারপর আকর্ষণীয় একটি নাম ও ডেকোরেশন করতে হবে। পরবর্তীতে কম্পিউটার বিলিং সিস্টেম সফটওয়ার নিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এছাড়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য নেওয়ার বিষয়ে চুক্তি করতে হবে। এ ব্যবসা ৫ জন কর্মচারী দিয়েই শুরু করতে পারেন। তবে এখানে অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
৩। পাইকারি ডিম ব্যবসা:
আপনার নিকট ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা থাকলেই আপনি নেমে পড়তে পারেন লাভজনক এ ব্যবসাটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে একমাত্র ডিম যা ভোক্তার বাজার লিষ্টে থাকবেই। অত্যাধিক চাহিদা সম্পন্ন এ ব্যবসাটি আপনি ৫ জন কর্মচারী দিয়েই শুরু করতে পারবেন।
যেভাবে শুরু করবেন:
- নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা যোগাড় করুন।
- একটি ওয়ার হাউজ (গোডাউন) ও অফিস কক্ষ ভাড়া দিন।
- ডিম সাপ্লাই এর এলাকা নির্ধারণ করুন। শুরুতে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াবেন না।
- ভ্যান ড্রাইভারসহ ৫ জনকে নিয়োগ দিন, যারা দোকানে দোকানে অর্ডার নিয়ে ডিম পৌঁছে দেবে।
- ডিমের আড়ত থেকে ডিম সংগ্রহ করুন। এ ক্ষেত্রে আড়তে কোনো পাইকারের সঙ্গে চুক্তি করুন।
- ব্যবসা শুরু করে দিন।
৪। পাইকারি মুদি দোকান:
আপনার এলাকায় পাইকারি বাজারে একটি মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকটা কম। তবে বাজারে দোকান খালি পাওয়াই চ্যালেঞ্জ। যদি খালি পান, তবে দেরি না করাই ভালো।
৪-৫ জন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিন। মালামাল লোড আন-লোডসহ খুচরা দোকানিদের অর্ডার অনুযায়ী পণ্য দেওয়ার সব কাজ কর্মচারীরা করবেন। আপনি নিজে অথবা বিশ্বস্ত কাউকে ক্যাশ কাউন্টারে বসাতে হবে। এছাড়া একটি গোডাউন ভাড়া নিয়ে নেবেন। এ ব্যবসায় কোম্পানি ও গ্রোসারি পণ্যের ডিলারদের সঙ্গে লেনদেনে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো। নয়তো, ব্যবসাটি বুঝে উঠতে আপনাকে কয়েক মাস সময় দিতে হবে।
শতর্কতা:
- লেনদেনের হিসাবে ভুল করা যাবে না।
- ইউনিট মুনাফা সীমিত হওয়ায় সুক্ষ্ণভাবে হিসেব করে লেনদেন করতে হবে।
- খুচরা দোকানীকে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ তারাই আপনার আসল ক্রেতা।
- বাকিতে পণ্য দেওয়া যাবে না
- শুরুতে ঋণ করা যাবে না
যেমন বাজেট প্রয়োজন:
এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ব্যবসা। এখানে বেশিরভাগ নগদ টাকার লেনদেন হয়। এখানে আপনার বিনিয়োগ যত বেশি, মুনাফা ততো বেশি হবে। অন্তত ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৫। খাবার হোটেল ও ফাস্ট ফুড:
জনবহুল এলাকায় খাবার হোটেল অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। এ ব্যবসায় খাবার খরচের অর্ধেক মুনাফা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি।
এছাড়া জনবহুল, আবাসিক ও অফিস পাড়ায় ফাস্ট ফুডের চাহিদা এখন তুঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে দোকানের লোকেশন ও রাধুনী (শেফ) অত্যন্ত সেনসেটিভ বিষয়। দুটোই ভালো হতে হবে।
এ ব্যবসায় আপনার ৪-৫ জন কর্মচারী নিয়েই শুরু করতে পারবেন। এটি লাভজনক ব্যবসাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
যেমন বাজেট প্রয়োজন:
খাবার হোটেলে দামী ডেকোরেশন প্রয়োজন হয় না। এখানে মূল বিনিয়োগ খাবারের আইটেমে। এটি ১০-১৫ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন।
এছাড়া ফাস্ট ফুড ব্যবসায় ডেকোরেশন অত্যন্ত ভালো করে করতে হয়। এখানে তিন খাতে খরচে কাটছাঁট করা যাবে না।
- খাবার আইটেম।
- আকর্ষণীয় ডেকোরেশন।
- অভিজ্ঞ শেফ।
এছাড়া এখানে প্রচারণা ও গ্রাহক রিভিউ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০-১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে শুরু করতে পারেন এ ব্যবসা। তবে এলাকা অনুযায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
লেখকের বক্তব্য:
আপনার কাছে যদি অর্থ থাকে তাহলে, অলস অর্থ ফেলে না রেখে বিনিয়োগ করুন। নিজে লাভবান হন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিন। উল্লেখিত ৫টি ব্যবসার ধারণা আপনার বিনিয়োগে সহায়ক হতে পারে। সৎভাবে ব্যবসা করুন, সফলতা আসবেই।






মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন