সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে মাছ চাষ করুন, সাফল্য ধরা দেবে
বর্তমান সময়ে দেশে মাছের চাহিদা অনুযায়ী যোগান পর্যাপ্ত নয়। মানুষের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না উৎপাদন। আগের মতো নদী বা খালেও তেমন মাছ মেলে না। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে বিনিয়োগ ও সঠিক পরামর্শ এবং পরিকল্পনার অভাবে অনেকেই সাহস করতে পারেন না। এছাড়া দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অন্যতম উপাদান হওয়ায় মানুষের খাবার প্লেটে মাছ অন্যতম একটি আইটেম।অপরদিকে দেশে চাহিদার বিপরীতে যোগান কম থাকায় মাছের দাম বেশ ঊর্ধ্বমুখী। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি জেনে মাছ চাষ বেশ লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে আপনার জন্য। তবে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ শুরু করার আগে যাবতীয় পরামর্শগুলো জেনে নিতে হবে।
স্টেপ-১
জেলা অথবা উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করবেন। এছাড়া আশেপাশের অভিজ্ঞ ও পুরাতন মাছচাষিদের নিকট কাছে থেকে পরামর্শ গ্রহণ করবেন। একইসঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষের বিভিন্ন খামার পরিদর্শন করে ভালো ধারণা নিতে হবে। প্রয়োজনে সেগুলো নোট রাখবেন।
স্টেপ-২
মৎস্য অধিদপ্তরের ওয়েব পোর্টাল থেকে মৎস্য চাষের পরামর্শ থেকে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষের পরামর্শ ও রোগবালাই সনাক্তকরণ বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে নেবেন।
মাছ চাষ যেসব ধাপে শুরু করবেন:
১। উপযুক্ত পুকুর বা জলাশয়।
২। মাছের জাত নির্বাচন।
৩। মাছের খাওয়া।
৪। যত্ন, পরিচালনা ও ধরার পদ্ধতি।
৫। বিপণন ক্ষেত্র নির্বাচন।
পুকুর বা জলাশয় নির্বাচন:
বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত পুকুর বা জলাশয় নির্বাচন করতে হবে। পুকুর করতে সমতল জমি বেছে নেবেন। এসময় উঁচু ও বন্যা প্রবণ এবং দূষিত এলাকা এড়িয়ে যাবেন।
কারণ বন্যার কারণে আপনার সব স্বপ্ন ভেসে যেতে পারে। এছাড়া উঁচু স্থানে পানি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ। এছাড়া ফসলের ক্ষেতে কাছে পুকুর নির্বাচন না করা ভালো। কেননা জমির ফসলে দেওয়া সার ও কীটনাশক পানিতে মিশে গেলে বড় ক্ষতির মুখ পড়তে পারেন। এছাড়া মাছ চাষের জলাশয় বা পুকুরের আশপাশে যেন মাছ পরিবহনের পথ থাকে।
পুকুর তৈরি:
পুকুর তৈরি করার আগে একটি ম্যাপ তৈরি করুন, এরপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী পুকুর কাটুন। পুকুর তৈরির সময় পানি ধরে রাখাসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করুন।
তবে নির্দিষ্ট মাছের জাতের জন্য নির্ধারিত ম্যাপ সম্পর্কে জানতে কাছের ফিশারি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন। এছাড়া পুকুর যেন আবর্জনামুক্ত ও ভালো পরিবেশে থাকে সে ব্যবস্থা করুন। একই সঙ্গে পুকুর ব্যবস্থাপনায় একটি পরিকল্পনা করুন।
মাছের জাত নির্বাচন:
এ ব্যবসায় ভালো মুনাফা পেতে মাছের ভালো জাত নির্বাচন করুন। এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে চাহিদা ও মাছের বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ হিসাব নিকাস করে পদক্ষেপ নিন।
বাজারে যে মাছের চাহিদা বেশি একইসঙ্গে দাম বেশি এমন জাতের মাছ চাষ করুন। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন মাছ হলো-
- রুই
- কার্প
- কাতল
- মৃগেল
- কই
- তেলাপিয়া
- পাঙ্গাশ
- শিং
মাছের খাবার:
বাণিজ্যিক মাছ চাষে প্রাকৃতিক কোনো উৎস থেকে মাছ খাবার পাবে না। তাই এখানে মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য খাবারে জোর দিতে হবে। মানসম্পন্ন ফিড সরবরাহ করতে হবে।
ফিড ভালো না হলে বৃদ্ধি কম হবে। এ বিষয়ে ফিড বিক্রেতারা অনেক সময় কারচুপি করে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। এছাড়া মাছকে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি খারারও দিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন।দূষিত না হয়। মাছের জাতের উপর ভিত্তি করে খাবার দিতে হয়। এ জন্য একজন লোক নার্সিং এর জন্য নিয়োগ করলে সবচেয়ে ভালো।
জলাশয় বা পুকুর ব্যবস্থাপনা:
মাছের বৃদ্ধি বাড়াতে মাঝে মধ্যে পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া পুকুরে মাছের স্বভাবিক বৃদ্ধিতে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ের পানি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে যেন পিএইচ মাণ ঠিক থাকে। প্রয়োজনে চুন ব্যবহার করতে হবে।
নিরাপত্তা:
খামারে নিজস্ব নাইট গার্ড রাখতে হবে। যেখানে তার খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া খামার রক্ষণাবেক্ষণে অন্তত একজনকে নিয়োগ করতে হবে। এছাড়া চুরি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ:
১। পুকুর পাতা আবর্জনা মুক্ত রাখতে উপরে জাল বিছিয়ে নেওয়া যায়। এতে পুকুরের তলার পরিবেশও বেশ ভালো থাকবে।
২। বড় জলাশয় ও নদী উপকূলে বা বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে পারে এমন এলাকা মাছ চাষ করার জন্য নিরাপদ নয়।
৩। খামার শতভাগ নিরাপদ রাখতে সিসি ক্যামেরা সেটআপ করতে পারেন। এতে মাছের খামার ও নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত হবে।
৪। বন্যা বা পুকুর পার ভাঙন রোধে পানির চ্যানেল তৈরি করা। যেন অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
৫। যখন তাপমাত্রা কম থাকনে যেমন; সকাল বা বিকেলে মাছ ধরুন। এরপর যত দ্রুত সম্ভব মাছ বাজারজাত করুন।
৬। মাছ বিক্রি করতে পাইকারি আড়তে কিছু পাইকারের সঙ্গে চুক্তি করুন। এছাড়া একটি একটি ব্যবসায়ীক সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনি নিজস্ব তত্বাবধানেও মাছ বাজারজাত করতে পারেন।
লেখকের মতামত;
মাছের চাহিদা সবসময় থাকবে। তাই আপনি উৎপাদনে মনোযোগী হন। আপনার কাছে পণ্য থাকলে পাইকাররাই আপনাকে খুজে বের করবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করুন। এছাড়া উৎপাদন খরচ যেন বাজার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এতে প্রাকৃতিক বা মানুষ্য সৃষ্টি কোনো দুর্যোগ না এলে এ ব্যবসায় লসের সম্ভাবনা অনেক কম। তবে দিন শেষে যে কোনো ব্যবসায় দক্ষতা ও পরিশ্রম সবচেয়ে বড় পুজি।




মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন