চালের ব্যবসা যেভাবে শুরু করবেন
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভাত খায়। এ অঞ্চলে মানুষের প্রধান খাদ্যতালিকায় ভাত অন্যতম। তাই এখানে ধান চালের বাজার বেশ শক্তিশালী। এছাড়া এ খাতে লসের সম্ভাবনা অনেক কম।
ধান চালের ব্যবসা সফলতা পেতে করে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এছাড়া এ ব্যবসা কীভাবে শুরু করে ও পরিচালনা নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। এ ব্যবসায় হুজুগে নেমে পড়া যাবে না, তবে বাজার সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা নিয়ে নামলে খুব দ্রুতই সফলতা ধরা দেবে।
চালের ব্যবসা:
আসুন চালের ব্যবসা শুরু করার আগে এ বিষয়ে বেশ কিছু স্পষ্ট ধারণা নিয়ে নেই।
চালের ধরণ চেনা:
চালের ব্যবসা শুরু করার আগে প্রাথমিকভাবে চাল নিয়ে ভালো ধারণা প্রয়োজন। বাজারে কোন চালের চাহিদা বেশি সেটা জানতে হবে। তবে ব্যবসা শুরু করলে কম বেশি সব ধরণের চাল রাখতে হবে।
চালের ধরণ
১। আতপ
২। সিদ্ধ
আতপ চাল দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ পিঠা তৈরি করে। আর সিদ্ধ চাল দিয়ে ভাত রান্না করা হয়।
সিদ্ধ চালের বিভিন্ন জাত-নাম
- আটাশ
- উনত্রিশ
- মিনিকেট
- পাইজম মোটা
- নাজির চাল
- লতা
- বাসমতি
যে পরিমাণ পুঁজি প্রয়োজন:
চালের ব্যবসায় বেশি পুঁজি থাকলে বেশি লাভ হবে। এখানে ঝুকি কম। তবে প্রাথমিকভাবে একটু কম নিয়েও শুরু করতে পারেন। ধরুণ আপনি সিদ্ধ ও আতপ চাল সব জাতের ২৫ কেজির ১০ বস্তা ও ৫০ কেজির ৫ বস্তা নিলেন।
সে হিসেবে পাইকারি খরচ (আনুমানিক - সময় বিবেচনায় কম বেশি হতে পারে):
আটাশ ও উনত্রিশ: ২৫×১০= ১৪,০০০৳
৫০×১০= ২৭,৫০০৳
পাইজম মোটা চাল: ২৫×১০= ১২,৫০০৳
৫০×১০= ২৫,০০০৳
মিনিকেট চাল: ২৫×১০= ১৭,০০০৳
৫০×১০= ৩৫,২০০৳
নাজির শাইল চাল : ২৫×১০= ২০,০০০৳
৫০×১০= ৪০,০০০৳
বাসমতি (বাংলামতি): ২৫×১০=২৫,০০০৳
৫০×১০= ৫০,০০০৳
কালোজিরা গ্রেড এ : ২৫×১০= ৩০,০০০৳
কালোজিরা গ্রেড বি : ২৫×১০= ২৭,০০০৳
চিনিগুড়া প্যাকেট : ২৫×১০=৩০,০০০৳
চালে মোট ৪৫০০ কেজি (১১২.৫ মণ) চালে বিনিয়োগ ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০০ টাকা। এর মানে আপনাকে হাতে আরো অন্তত ২ লাখা টাকা ক্যাশ রাখতে হবে। মোট সাড়ে ৫ লাখ টাকা চালে বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
চালের ব্যবসা শুরু করতে বেশি কাগজপত্রের দরকার হয় না। শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কিছু ক্যাশ ম্যামু করে নিলেই যথেষ্ট।
পাইকারি চাল নিবেন যেখান থেকে:
বাংলাদেশে চালের পাইকারি বাজারের মধ্যে অন্যতম হলো, বাবুবাজার, বাদামতলী চালের আড়ত। পুরান ঢাকার এ আড়তে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাল আসে।
এছাড়া মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট, কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ি আড়তে থেকেও পাইকারি চাল নেওয়া যায়।
বাবুবাজার-বাদামতলীতে থেকে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লেনদেন করা হয়।
অপরদিকে সরাসরি রাইস মিল থেকেও চাল কেনা যায়। তবে একটু বেশি পরিমাণ কিনিতে হয়। একইসঙ্গে চাল বাজারজাত করতে চটের বস্তা কিনতে হয়। এছাড়া সারাদেশে জেলাশহরে চালের আড়ত রয়েছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ ও দিনাজপুরে বৃহৎ চালের আড়ত ও মিল রয়েছে।
যেভাবে দোকান সাজাবেন:
চালের দোকান সাজানোর জন্য তেমন ডেকোরেশন করতে হয় না। তবে দোকানের সাইজ বড় নিতে হবে। নয়তো আলাদা গোডাউনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া দোকানের পজিশন নির্বাচনে জনবহুল এলাকা বেছে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকা নির্বাচন করা সবচেয়ে উত্তম।
ক্রেতা ও বাজার:
চাল মানুষের নিত্যপণ্যের মধ্যে অন্যতম। তাই এখানে বাজার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া ক্রেতা ও চাহিদা বেশি থাকায় এতে অধিক মুনাফা হয়।
তবে এ ক্ষেত্রে সব ধরণের চাল রাখতে হবে। এছাড়া খোলা ও বস্তা এবং প্যাকেট সব ধরণেই আইটেম রাখতে হবে। যেন ক্রেতা নিজের পছন্দমতো নিতে পারেন।
চালে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ৩-৫ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। এছাড়া পাইকারিতে ১-২ টাকা। তবে পুলাউ চালের ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কেজে প্রতি প্রায় ১৫-২০ টাকা। পাইকারিতে ৮-১০টাকা। চাল পরিমাণে বেশি বিক্রি হওয়ায় কম লাভেও অধিক মুনাফা থাকে।
বিক্রি বাড়ানোর কৌশল:
প্রথমেই মূল্য ছাড় দিয়ে একটা প্রাথমিক পরিচিতি ও প্রচার পেতে হবে। এরপর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাজার দামের চেয়ে কিছুটা কম মূল্যে ছেড়ে দেবেন।
এছাড়া ক্রেতারা সঙ্গে একটি বিশ্বস্ততাপূর্ণ সম্পর্ক করতে হবে। এছাড়া আশপাশের মুদি দোকানে মাল পৌছে দিতে পারেন। একই সঙ্গে দাম দিয়ে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হবে।
তবে সব কিছুর উর্ধ্বে ক্রেতাকে ভালো মানের চাল দিতে হবে। এটা ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং সফলতার অন্যতম ধাপ।
খেয়াল রাখবেন এ বিষয়গুলো:
১। এ ব্যবসায় বাকি দেওয়া যাবে না। বাকি দিলে আপনি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২। পাইকারিতে চাল কেনার সময় লাভ করতে চেষ্টা করবেন। চাল কিনতে গিয়ে যেন ঠকে না যান। এ জন্য আগে থেকেই বাজার পর্যালোচনা ও যাচাই করবেন।
৩। ভালো মানের চাল রাখবেন। এছাড়া ক্রেতাকে সঠিক তথ্য দেবেন। একটা বলে অন্যটা দেবেন না। মিথ্যা তথ্য দিলে ওই ক্রেতা আরা আপনার কাছে আসবেন না।
লেখকের মতামত:
চালের ব্যবসা হলো খানদানি ব্যবসা। এ ব্যবসা করে অনেক মুনাফা আয় করা যায়। উল্লেখিত পরামর্শগুলো বিবেচনা করলে ব্যবসায় সফলা আশা করা যায়। তবে ভুলেও এ ব্যবসায় ছলচাতুরী করা যাবে না। কারণ, এতে সাময়িক মুনাফা হলেও এ ব্যবসায় টিকে থাকা যাবে না। সৎভাবে ব্যবসা শুরু করে আপনার জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন, সফলতা আসবেই।




মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন